আগুন সন্ত্রাসী ও মানুষ হত্যাকারীদের প্রতিহতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস-খুন করে জনগণের হৃদয় জয় করা যায় না। এটা তাদের (বিএনপি-জামায়াত) জানা উচিত এবং তাদের সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
তিনি বলেন, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আন্দোলন-সংগ্রাম করে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। নির্বাচনী সংস্কার আমরা করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কাকে তারা নির্বাচিত করবে। কে সরকারে আসবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ায়, আন্দোলনের নামে রেলগাড়িতে যাতে দুর্ঘটনা হয় সেজন্য মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি করে রাখে। মানুষ হত্যা করে, মানুষকে পুড়িয়ে মারে। জিয়াউর রহমান যেমন মানুষ হত্যা করেছে, খালেদা জিয়া এসেও একই কাণ্ড করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, কোটালিপাড়ায় বোমা রেখে দেওয়ার মতো বহু ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ঠিক একইভাবে আজ লন্ডনে বসে হুকুম দেওয়া হচ্ছে। ওখান থেকে হুকুম দেওয়া হয় আর এখন থেকে তাদের দল আগুন দেয়। এই যে আগুন নিয়ে খেলা, এই খেলা ভালো নয়। বাংলাদেশের মানুষ এটা কখনো মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানোবো, যারা অগ্নিসন্ত্রাসী তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ওরা হরতাল দিয়ে লুকিয়ে থাকে। ঘরে বসে থাকে। তার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছে, সে সুযোগ নিয়ে গুপ্তস্থান থেকে তারা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দেয় আর মানুষ হত্যার নির্দেশ দেয়। লন্ডনে বসে আছে এসবের হুকুমদাতা।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জানে তাদের কিসে ভালো, কিসে মন্দ। আর কোন দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের কল্যাণ হয়। আজ দেশের মানুষকে আমি এটাই আহ্বান জানাবো এই দুর্বৃত্ত অগ্নিসন্ত্রাসী, খুনি, যারা মানুষ খুন করার জন্য রেললাইনের পাত ফেলে দেয়, রেললাইন কেটে রাখে আর আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, এদের বিরুদ্ধে পুরো দেশের মানুষকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আর রেললাইন থেকে শুরু করে সব জায়গায় পাহারা দিতে হবে। যারা রেললাইন কাটতে যাবে, আগুন লাগাতে যাবে তাদের ধরিয়ে দিন, উপযুক্ত শিক্ষা দিন। এদের ধ্বংসাত্মক কাজ এদেশে চলতে পারে না।
সরকার প্রধান বলেন, করোনা মহামারি থেকে যখন আমরা কেবল উঠে আসছি তখন এলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন, সেটাকেও মোকাবিলা করে আমরা যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি, এই সময় তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল-অবরোধ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আবার ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নেবে না। এই বার্তাটা সবাইকে পৌঁছে দিতে হবে যে, এরা মানুষের কল্যাণ চায় না, লুটপাটের রাজত্ব চায়। এরা ভোটে যেতে সাহস পায় না। কারণ, তারা জানে ওই অগ্নিসন্ত্রাসী, খুনি, এদের বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেবে না। সেজন্যই তারা ওই নির্বাচন বানচাল করতে চায়। সরকার উৎখাত করতে চায়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে উঠে আসেনি। আওয়ামী লীগ দেশের মাটি-মানুষের সংগঠন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এই সংগঠন গড়ে উঠেছে। কাজেই এই সংগঠনের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। আওয়ামী লীগকে এভাবে তারা কোনো দিনই উৎখাতও করতে পারবে না, দাবাতেও পারবে না।
এসময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি জানান, কুয়েতের আমিরের মৃত্যুতে সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করায় আওয়ামী লীগের বিজয় র্যালি ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে শুরু হয়ে র্যালিটি ধানমন্ডি ৩২ এ বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হবে।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং সহ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীমের সঞ্চালনায় সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও সুজীত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল আলম মিলন এমপি, কেন্দ্রীয় নেত্রী মেরিনা জাহান কবিতা এমপি, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ বজলুর রহমান ও হুমায়ুন কবির প্রমুখ বক্তৃতা করেন।