আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলমকে সভাপতির পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকালে পেকুয়ার একটি নির্বাচনী সভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে অসৌজন্যমূলক, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রাখায় এবং ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
আজ বুধবার (২০ ডিসেম্বর) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত সাময়িক বহিষ্কারাদেশে আরও বলা হয় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পেকুয়ায় দেয়া বক্তব্যের ব্যাপারে যথোপযুক্ত জবাব দিতে বলা হয়েছে। যথাযথ জবাব দিতে না পারলে স্থায়ী বহিষ্কার করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে লিখিত আবেদন করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় পেকুয়ায় নিজের সমর্থনে আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে জাফর আলম আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমি একবার মনোনয়ন পেয়েছি। কিন্তু আমি শতবার মৃত্যুর মুখে আপনার জন্য গিয়েছি। আমি আপনার জন্য আমার জীবনে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি। আমি কক্সবাজারে এক মিটিংয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ করেছি। আপনাদেরকে থ্রি স্টার হোটেলে রেখেছি। মাতারবাড়িতে ৪০ হাজার মানুষকে একদিনের খাবার দিয়ে এক হাজার ট্রাক গাড়ি দিয়ে আমি জনসভাকে সফল করেছি। আপনি (শেখ হাসিনা) সেখানে ঘোষণা করলেন আশেক উল্লাহ রফিক এমপি (প্রার্থী)।
হুমকিসরূপ এমপি জাফর প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, শোনেন..!!! নেত্রী, আল্লাহ উপরে। আমি দোষ করলে আল্লাহ আমার বিচার করবে। কিন্তু আমি মনে করেছি এটা আমার প্রতি অবিচার হয়েছে। আমার মতো একজন সহজ-সরল কর্মীকে, আমাকে বারবার ঠকিয়ে আরেকজনের কাঁধে নৌকা দিয়ে আমার কাছ থেকে নৌকা কেড়ে নিয়েছিলেন। সেদিনও আমি হাসিমুখে মেনে নিয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাকে ভোট দিতে না পেরে নেতাকর্মীরা চোখের জল ফেলে চলে গেছে। সেদিনও আমি আপনার কথা শোনেছি।
এমপি জাফর আলম বলেন, সুতরাং, এখন আপনি বলেছেন, সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র ভোট করতে পারবেন। আমি স্বতন্ত্র ভোট করতেছি। এখানে যদি আমি কারো কোন ধরনের অশুভ পায়তারা দেখি আমরা চকরিয়ার মানুষ। শহীদ আব্দুল হামিদের চকরিয়া, আবুল কালমের চকরিয়া, পেকুয়া এটা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চকরিয়া। এখানে কোন অন্যায় আমরা বরদাস্ত করবো..না, করবো না.., করবো.. না।
জাফর বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার চেয়ে নৌকাকে ভালবাসে এমন কে আছে। দিনে নৌকা, রাতে বিএনপি, কার টেলিফোন রিসিভ কর, কার জায়গা দখল কর। সব আমার কাছে খবর আছে। আমাকে পেকুয়ার ভোট দিবেন কি, দিবেন না সেটি আপনাদের ব্যাপার। চাঁদাবাজা, দখলবাজ এগুলা চলবে..না চলবে..না চলবে..না। সোজা কথা।
নিজের অবস্থান তুলে ধরে জাফর বলেন, ‘এখনো বলছি ইনশাল্লাহ, আল্লাহর যদি রহমত থাকে জাফর জনতা.., জাফর জনতা। আল্লাহর রহমত ছাড়া আমাকে রোখার সাধ্য নাই কারো। আমার মার্কা ট্রাক, কেন ট্রাক নিয়েছি..। নৌকার অবস্থা বেশি খারাপ। নৌকাকে ট্রাকে তুলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে আবার বলবো, ট্রাক মনে করিয়েন না আপা, এটা নৌকা। টিক আছে। আমি আপনার জাফর।
বক্তব্যে আক্ষেপ করে জাফর আলম আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী একদিন বলতেন ‘আমার জাফর’। কেন জানি না, কোন কালো ইশারায় আমি আপনার পর হয়ে গেলাম।
এই বিষয়ে সংসদ সদস্য জাফর আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে বক্তব্যের বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, তাঁর বক্তব্যকে একটি মহল বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পুরো বক্তব্য শুনলে বোঝা যাবে, তিনি আবেগতাড়িত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাঁর আনুগত্যের কথা বলেছেন। একই সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের জন্য কাজ করেও মনোনয়ন না পাওয়ার বেদনা সহযোদ্ধাদের কাছে ভাগ করে নিয়েছেন। একটি চিহ্নিত মহল তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করছে দেখে তিনি মর্মাহত হয়েছেন। এটা তাঁকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র বলে তিনি মনে করেন।