আনোয়ারায় গার্মেন্টসকর্মী সুমন নাথকে (৪০) অপহরণের ঘটনায় পুলিশের অভিযানে ভিকটিম উদ্ধার ও ৪ অপহরণকারীকে আটক করা হয়। এরপর ভিকটিমের স্ত্রী বাদিনীকে মধ্যরাতে জোর করে থানায় এনে সমঝোতার কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আনোয়ারা থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহিউদ্দিন বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার রাত আড়াইটায় থানায় এ ঘটনা ঘটে বলে ভিকটিমের স্ত্রী জুমি দেবী অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহিউদ্দিন বলেন, বাদিনী ভুল তথ্য দেওয়ায় মধ্যরাতে ওসি সাহেবের নির্দেশে আসামিদের বাদিনীর জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে আগামী সোমবার সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক হবে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকালে সুমন নাথ নামে এক গার্মেন্টসকর্মীকে অপহরণ করে চন্দনাইশ উপজেলার কেশুয়া এলাকায় একটি বাড়িতে জিম্মি করে। ভিকটিমের মোবাইল থেকে তার স্ত্রী জুমি দেবীর কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এ ঘটনায় জুমি দেবী আনোয়ারা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর পুলিশ গত শুক্রবার বিকাল ৪টায় অপহৃত সুমনকে উদ্ধার এবং ঘটনায় জড়িত ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর কয়েক ঘণ্টার নাটকীয়তা শেষে রাত আড়াইটায় পুলিশ বাড়ি থেকে ভিকটিমের স্ত্রী জুমি দেবীকে থানায় এনে সমঝোতা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আটক ৪ আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
সুমন নাথ জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে চৌমুহনীতে ঔষধের জন্য গিয়েছিলাম। এ সময় আমার সহকর্মী ফারুক আমাকে চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যাবে বলে সিএনজিতে তুলে আরো ২/৩ জনসহ জোর করে বরকলের দিকে নিয়ে যায়। একটি ঘরে আটকে আমার মোবাইল থেকে আমার স্ত্রীকে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকার জন্য আমার স্ত্রীকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। পরে আমার স্ত্রী থানায় অভিযোগ করলে শুক্রবার বিকালে পুলিশ গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে এবং ৪ জনকে আটক করে।
সুমনের স্ত্রী জুমি দেবী জানান, আমার স্বামীকে অপহরণের ঘটনায় পুলিশের সামনে অপহরণকারীরা আমার স্বামীর ফোন কেড়ে নিয়ে ওই ফোন থেকে বারবার আমার কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে আসছিল। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে শুক্রবার পুলিশ আমার স্বামীকে উদ্ধার করে এবং এই ঘটনায় ৪ অপহরণকারীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ মামলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু রাত আড়াইটায় ওসি তদন্ত মো. মহিউদ্দীনসহ পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে আসে। জোর করে বেশ কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর নেয়। আটককৃতদের লোকজন থানায় ভিড় করে আমাদের উল্টো ভয়–ভীতি দেখায়। তিনি বলেন, পুলিশ বলেছে, আগামী সোমবার আমাদের সমঝোতা করে দেবে। তোমাদের মামলা হবে না। এখন আমরা অসহায়।
অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মহিউদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন ছিল। তবে আমরা জানতে পারলাম বাদী তথ্য গোপন করে এটা অপহরণের ঘটনা বলেছে। মূলত বাদিনীর স্বামী সুমন নাথ বিবাদীদেরকে ব্যবসার লোভ দেখিয়ে ২ লাখ নেয়। সে কারণেই এই ঘটনা ঘটে। তাই রাতে বাদিনীকে থানায় এনে ওসির নির্দেশে বাদিনীর জিম্মায় আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহম্মদে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।