সরকারী চাকুরীতে কোটার কারণে মেধাবীরা বৈষম্যের শিকার হয়ে বঞ্চিত ছিলেন। কোটা প্রথা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে চাকুরী পাওয়ার জন্য গত ১৫ই জুলাই, ২০২৪ ইং ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের ছাত্র আবু সাইদ পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করলে, সারাদেশে আন্দোলন বেগবান হয়। সরকারী চাকুরীর কোটা বাতিলের আন্দোলন রূপ নেয়, সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক ও সাধারণ জনগণ আন্দোলনে যোগ দেন। ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ই আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়। ঐ আন্দোলনে ছাত্র আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, মোঃ নাহিদ ইসলাম, শারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার, মাহিন সরকার, রাফিয়া রেহনুমা হৃদি, আরিফ হোসেন এবং আরও অনেকে সমন্বয়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ইতিহাসে এই প্রথম একটি তথাকথিত নির্বাচিত সংসদ ও সরকার গণ-অভ্যুত্থানে পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। ০৮ই আগস্ট গঠিত হয় নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুরু হয় সংস্কারের কাজ। সর্বত্র দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত অযোগ্যদের অপসারণ ও পদত্যাগ।
অযোগ্যদের স্থলে নিয়োগ দেওয়া হয় যোগ্য ও মেধাবীদের।
সে হিসেবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান ড. নিয়াজ আহমদ খান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসাবে যোগদানের পর তিনি বলেন, শিক্ষকদের দলীয় হওয়ার কোন প্রকার সুযোগ নেই। তিনি মনে করেন প্রত্যেক লোকের একটি রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকতে পারে। কিন্তু সেই বিশ্বাস, সেই চিন্তা তাকে প্রভাবিত করতে পারবে না।
ড. খান আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের প্রতিষ্ঠান, কারো কোনো প্রকার ব্যক্তিগত বা দলীয় প্রতিষ্ঠান নয়। সার্বিকভাবে ও জাতীয় ভাবে ক্যারিয়ার প্ল্যানিং আমাদের নাই। দুর্ভোগের কারণ হলো সংকীর্ণতা, অস্বাভাবিক রাজনীতিকরণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের কারণ। তারপরও তিনি আশাবাদী যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা কমিয়ে এনে শিক্ষার পরিবেশ ভালো করা সম্ভব।
ভিসির বর্ণাঢ্য জীবনের আংশিক তথ্য তুলে ধরা হলোঃ
ঈর্ষনীয় শিক্ষা জীবনঃ শিক্ষা জীবনে কখনো ২য় না হওয়া অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সরকারি গভঃ হাইস্কুল থেকে (কুমিল্লা বোর্ড) মাধ্যমিক পরীক্ষায় (মানবিক বিভাগ) প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।১৯৮৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন (কুমিল্লা বোর্ড)। যার কারনে বোর্ড মেডেল এওয়ার্ডপ্রাপ্ত হন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং উভয় পরীক্ষাতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করে শীর্ষ স্থান ধরে রেখে ঈর্ষনীয় ফলাফল করেন। মাষ্টার্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ফ্যাকাল্টির মধ্যে সর্বোচ্চ মার্ক নিয়ে শীর্ষ স্থান দখল করায়, তাকে গুলমেহের গোল্ড মেডেল পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
প্রফেসর খান যুক্তরাজ্যের ওয়েলস ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসহ পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পোষ্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পাদন করার পাশাপাশি তিনি অসংখ্য প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন, যা বাংলাদেশের পরিমন্ডলে বেশীরভাগ অধ্যাপকের নাই বললেই চলে। খান সাহেবের পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রে মোটা বেতনের অধ্যাপনার সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও, একমাত্র দেশপ্রেমের কারনে টাকার মোহ তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারে নাই। দেশের মাটিতেই তিনি চলে এসেছেন।
পারিবারিক পরিচিতিঃ চট্টগ্রাম জেলা শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ডেপুটি বাজার থেকে পূর্বে চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা চুনতি গ্রামটি। ঐতিহ্য মন্ডিত প্রাচীন শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬৬ সনের সেপ্টেম্বর মাসে ডেপুটি বংশে ড. নিয়াজ আহমদ খান জন্ম গ্রহণ করেন। খান বাহাদুর নাসির উদ্দিন খান অবিভক্ত ভারতের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর।তার দৌহিত্র মরহুম কবির উদ্দিন আহমদ খান বি.এ (অনার্স) এম.এ (ইংরেজি) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, তাহার পিতা মরহুম তৈয়ব উল্লাহ খান নাসির উদ্দিন ডেপুটির ছোট ছেলে, তৈয়ব উল্লাহ খান পুলিশ ইনন্সপেক্টর ছিলেন। মরহুম কবির উদ্দিন আহমদ খান ডেপুটির ১৪ সন্তানের মধ্যে মরহুম ড. শফিক আহমদ খান ৬ষ্ঠ সন্তান,বি.এস.সি (অনার্স) এম.এস.সি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম (বায়োকেমিস্ট্রি)। জনাব শফিক আহমদ খানের ৪ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে ড. নিয়াজ আহমদ খান প্রথম।
ড. শফিক আহমদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন অধ্যাপনা করার পর পরবর্তীতে বিসিএস (বন) ক্যাডারে এসিএফ পদে চাকুরি নেন এবং তিনি বন সংরক্ষক থাকাবস্থায় চাকুরিকালীন সময়ে ইন্তেকাল করেন। জনাব খান সাহেবের পরিবারটি চুনতি এলাকার ডেপুটি বাড়ি হিসেবে বিখ্যাত।
কর্ণেল আরশাদ আহমদ খান, সাবেক পরিচালক, আনসার ও ভিডিপি, ড. নিয়াজ আহমদ খান সাহেবের চাচা, অন্যান্যদের মধ্যে ডেপুটি পরিবারে অসংখ্য ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবি, অধ্যাপক, জেলা ও দায়রা জজ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। সংক্ষিপ্ত পরিচয়ের মধ্যে ইসলামের ইতিহাসের পন্ডিত অধ্যাপক মরহুম ড. মঈন উদ্দিন আহমদ খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের ভাষা সৈনিক, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এডভোকেট মরহুম ফরমান উল্লাহ খান, লোহাগাড়া উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান বর্তমানে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল। চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক আমির মোহাম্মদ খান বিএ (অনার্স) এমএ, এই পরিবারের সন্তান। বাংলার অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সাবেক ডিজি বাংলা একাডেমী জনাব খান সাহেবের আপন ফুফাত ভাই।
বিখ্যাত সাহিত্যিক ও কবি সুফিয়া কামালের স্বামী লেখক ও অনুবাদক মরহুম কামাল উদ্দিন খান উনার ছোট দাদা, চুনতি সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ (অব:প্রাপ্ত) আলহাজ আমিন আহমদ খান প্রকাশ জুনু মিয়া তাঁর ছোট চাচা।