দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৯ ডিসেম্বর মাঠে নামছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। তাঁরা স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে ভোটের আগে-পরে ১৩ দিন দায়িত্ব পালন করবেন।
সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্ট গার্ড ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরাও ওই ১৩ দিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে।
গতকাল শুক্রবার পৃথক পরিপত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্বাচন ঘিরে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত লাইসেন্সধারী ব্যক্তিদের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। এ ছাড়া আগামী ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। ভোটের দিন ইন্টারনেট সচল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনী মোতায়েন:
পরিপত্রে বলা হয়েছে, প্রতি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় বিভিন্ন বাহিনীর ১৫ থেকে ১৭ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করবে সশস্ত্র বাহিনী। ভোটের আগে-পরের ১৩ দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী ‘মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আনসার ব্যাটালিয়ন সহযোগী ফোর্স হিসেবে পুলিশের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ দলে দায়িত্ব পালন করবে। আনসার-ভিডিপিসহ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সদস্যরা ভোটের আগের দুই দিন ও পরের দুই দিন মিলিয়ে পাঁচ দিন নিয়োজিত থাকবেন।
পরিপত্রে আরো বলা হয়, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় মহানগর এলাকা, মহানগর এলাকার বাইরে এবং পার্বত্য ও দুর্গম এলাকার সাধারণ ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৬ থেকে ১৭ জন পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তবে রিটার্নিং অফিসার চাইলে সংখ্যা বাড়াতে বা কমাতে পারবেন।
মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা:
নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে আগামী ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সব ধরনের প্রচারণা, এমনকি মিছিল-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনার আলোকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এসংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৭৮ অনুসারে ভোটগ্রহণ শুরুর আগের ৪৮ ঘণ্টা এবং ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা আয়োজন বা তাতে যোগদান না করার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টায়। এ হিসাবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে কোনো প্রার্থী নির্বাচন ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে।
মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধজ্ঞা:
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত সব নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। এ ছাড়া ৬ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল করতে পারবে না। কেবল জরুরি প্রয়োজনীয় বাহন ও ইসির অনুমতিপ্রাপ্ত যান চলাচল করতে পারবে।
আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা:
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঘোষিত তফসিল অনুসরণে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। আদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
ভোটের দিন ইন্টারনেট সচল রাখার নির্দেশ:
নির্বাচনী ফলাফল দ্রুত পাঠানোর জন্য টেলিফোন, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট সংযোগ সচল রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক-৬ পরিপত্রে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিপত্রে ভোটকেন্দ্রে ধূমপান থেকে বিরত থাকা এবং দিয়াশলাই, লাইটারসহ দাহ্য পদার্থ বহনে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক হিটার বা যেকোনো ধরনের চুলা ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সাহসী ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের ভোটগ্রহণে নিযুক্ত করার নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্রে বলা হয়েছে, পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকে ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্যদের জন্য যানবাহন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।