প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়া বা কারও সঙ্গে দেশের স্বার্থ বেচে, মানবতার সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা কখনো করিনি। যুক্তরাষ্ট্র আমার বিরুদ্ধে লেগে আছে সারাক্ষণ। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। এদের এ ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের জন্য এক সময় খেসারত দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার(২৮ ডিসেম্বর) রাতে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও সাবেক তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিনি তরুণ-তরুণীদের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাচ্ছি আমাদের সরকারের সব কাজ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে করব। যাতে স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সরকার এবং আমাদের ইকোনমিও হবে স্মার্ট ইকোনমি। সেইসঙ্গে আমি চাই আমাদের সোসাইটির সবাই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করুক। যত প্রযুক্তি আসবে তা শিখে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সম্পদ গ্যাস। ৯৬ সালে অন্য কোম্পানির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও গ্যাস উত্তোলন করে। তবে তারা গ্যাসটা বিক্রি করার কথা বললে, আমি আপত্তি করি। এর খেসারতও আমাকে দিতে হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, আজকে মানবাধিকার নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলে। শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, তারা নিজের দেশের দিকে তাকায় না। জাতিসংঘে আমি ফিলিস্তিন ইস্যুটা তুলেছিলাম। ইইউতেও আমি যখন গেলাম তখন খুব শক্তভাবে এ প্রশ্নটা তুলেছিলাম। এমনকি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দু-দুবার যুদ্ধ বন্ধের জন্য যে প্রস্তাব আসে তাতে আমেরিকা ভেটো দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকায় মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু তারা অন্য জায়গায় এসে খবরদারি করে। তারা আমাদের শ্রম অধিকার নিয়ে কথা বলে। তাদের ওখানে কর্মীরা একটা স্ট্রাইক করলে সবাইকে চাকরি থেকে বের করে দেয়। এতে তাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু অন্য দেশের বেলায় নাক গলায়।
শেখ হাসিনা বলেন, হাজার হাজার যুবক ইউক্রেনে জীবন দিয়েছে। রিফিউজি হয়েছে কত মানুষ। এখন যুক্তরাষ্ট্র বলছে তাদের টাকা নেই, দিতে পারবে না, করতে পারবে না সহায়তা। তাহলে যুদ্ধটা বাধাল কেন? ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের এক স্ট্যান্ড আবার ওইদিকে ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইসরাইলকে তারা উলটো আরও টাকা দিচ্ছে অস্ত্র কেনার জন্য। এদের মানবাধিকারের ডেফিনেশন কী সেটাই আমরা বুঝলাম না। পৃথিবী মনে হয় এটা বুঝতে পারেনি। তবে সারা বিশ্ব এ ব্যাপারে সচেতন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি ২০০১ সালে গ্যাস না দেওয়ার পর তারা (যুক্তরাষ্ট্র) ঝামেলা করেছিল। তবে জনগণ এখন সচেতন। তারপরেও কারও সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে ক্ষমতায় যেতে হবে ওই চিন্তা আমি করি না। ওরা তো লেগেই আছে আমার বিরুদ্ধে সারাক্ষণ, তাতে কিছু আসে যায় না। তারা ইলেকশনের ব্যাপারে অনেক কথা বলে। যখন তাদের প্রশ্ন করা হয়, এই যে বিএনপি ট্রেনে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে পুড়িয়ে ফেলল। এ ব্যাপারে তাদের মুখ বন্ধ। এদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে এদের নিজেদেরই এক সময় খেসারত দিতে হবে। এটা হলো বাস্তবতা।
হতাশা মোকাবিলার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী তরুণদের উদ্দেশে বলেন, এখন কোনো কিছু হলেই শুনি বোর হয়ে যাচ্ছি, আমাদের সময় এমন ছিল না। আসল কথাটা হলো আত্মবিশ্বাস। আরেকটা বিষয় হলো ডিজিটাল যুগ। আমরা যদি পাঁচজন এক জায়গায় বসি দেখা গেল সবাই হাতে একটা মোবাইল নিয়ে বসে আছি। এর কারণে বাইরের জগৎ চাদর দিয়ে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। এর কারণে হতাশা বাড়ছে। আমরা যখন যে কাজটা করব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করব। সেই কাজে আমি যদি সফল না হই, তবুও তো আমি আমার চিন্তা করলাম। এভাবে চিন্তা করলে হতাশ হবে না।