টিআইবির মতো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সংস্থাটি মাঝেমাঝে রাজনৈতিক দলের মতো বিবৃতি দেয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। শুক্রবার(২৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “দেশে গণতন্ত্রকে সংহত করতে, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন ও সুশাসনের জন্য টিআইবির মতো প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু তাদের প্রতিবেদন-বিবৃতি যেন একপেশে তথ্যনির্ভর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হয়, সেটিই প্রত্যাশা।”
প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে মঙ্গলবার টিআইবি জানিয়েছিল, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের ২৭ শতাংশ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। আর ১৮ জন প্রার্থী শত কোটি টাকার বেশি সম্পদের হিসাব দিয়েছেন তাদের হলফনামায়।
এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ‘আওয়ামী লীগের ৮৭ শতাংশ প্রার্থী কোটিপতি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার প্রতিক্রিয়ায় তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “গ্রামেও এক কাঠা জমির দাম ২০ লাখ টাকা, ৫ কাঠা জমির দাম ১ কোটি টাকা। আর ঢাকা শহরে ১ কোটি টাকার নিচে কোথাও জমি নাই। চট্টগ্রাম শহরেও নাই। সুতরাং এই হিসাব দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ নাই। তাদের এই হিসাব ধরে যদি কোটিপতি গোনা হয়, তাহলে সেই হিসাবে গরমিল আছে এবং সেটা উদ্দেশ্যে প্রণোদিত।”
মন্ত্রীর এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জমান বলেছিলেন, “টিআইবি সম্পর্কে মাননীয় মন্ত্রী বিষেদগার করতে গিয়ে ‘কোটিপতি’ প্রার্থীর ব্যাখ্যায় নিজের মনগড়া ও বিভ্রান্তিমূলকভাবে স্থাবর সম্পত্তির মূল্য অন্তর্ভুক্ত করার অপচেষ্টা করেছেন।
“অথচ টিআইবি যথানিয়মে এ সংক্রান্ত বিশ্লেষণে নগদ ও ব্যাংকে রক্ষিত টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও স্বর্ণালঙ্কারসহ শুধুমাত্র অস্থাবর সম্পদের হিসাব বিবেচনায় নিয়েছে। জমি, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের দাম কতো, তার অবতারণা এক্ষেত্রে অবান্তর। তিনি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পার্থক্য বুঝতে পারছেন না বা চাচ্ছেন না বলেই ধরে নেওয়াই যৌক্তিক।”
তার প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গ্রামেও ৫ কাঠা জমির দাম ১ কোটি টাকা, আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ১ কোটি টাকার নিচে জমি নাই,’ এই বক্তব্যের মানে হলো দেশে বহু মানুষই কোটিপতি।
“জনগণ টিআইবির কথায় বিভ্রান্ত হয়নি। আমার বিশ্লেষণে তারা ঠিক বুঝতে পেরেছে যে, ‘কোটিপতি’ শব্দটি এখন বিশেষ কোনো ভার বহন করে না।”
পদ্মা সেতুতে কল্পিত দুর্নীতি নিয়ে টিআইবির নানা বিবৃতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে না জানানোর পর টিআইবি বলেছিল- বিকল্প উৎস হতে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করতে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা (দুর্নীতির অভিযোগ থেকে) দৃষ্টি সরানোর উপায় বলে মনে হতে পারে এবং যদি এই সিদ্ধান্ত সফলও হয় তাতেও সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে না।
‘‘আবার তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের পদত্যাগের পরেও টিআইবি মন্তব্য করেছিলো যে- এখন অনেক দেরি হয়ে গেল, কয়েক মাস আগে বিশ্ব ব্যাংক যখন দুর্নীতির অভিযোগ আনল, তখনই পদত্যাগ হওয়া উচিত ছিল। অথচ পরে কানাডার ফেডারেল আদালতে প্রমাণ হয়েছে, পদ্মাসেতু নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়ই নি। অর্থাৎ টিআইবির এসব বিবৃতি ছিল ভিত্তিহীন, মনগড়া।”
কোভিড মহামারীতে টিআইবি একের পর এক বিবৃতি দিয়েছে, যার অনেকগুলোই পরে ভ্রান্ত প্রমাণ হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, ‘‘দুর্নীতির নানা কল্পিত চিত্রের পাশাপাশি টিআইবি বলেছিল, দেশের ৭ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ অর্থাৎ প্রায় দেড় লাখ মানুষ নাকি করোনায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। অথচ এ সময় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩০ হাজারেরও কম।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “২০১৫ সালে টিআইবি আমাদের মহান জাতীয় সংসদকে ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা’ বলেছিল। আর তারা পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিরুদ্ধে কোনো বিবৃতি দেয় না, অথচ সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে কেউ কিল-ঘুষি খেলে বিবৃতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এগুলো রাজনৈতিক দলের মতো আচরণ।”