নিজের দেওয়া আদেশ টেম্পারিং করে কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল ভুল নয়, জেনে-বুঝে অপরাধ করেছেন। ভুল আর অপরাধ এক না। একটি অন্যায় ঢাকতে গিয়ে আরও কয়েকটি অন্যায় করেছেন।
তলবের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা জজ হাজির হলে আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চ শুনানিতে এসব কথা বলেন। এক মামলায় আসামিদের জামিন দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে হাজির হয়েছিলেন ওই বিচারক।
শুনানির শুরুতেই ওই জেলা জজের পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চান তাঁর আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই দুঃখিত।’ হাইকোর্ট বলেন, ‘সিজেএম কোর্ট হাজতে পাঠালেন। তিনি জামিন দিলেন। তাঁর (জেলা জজ) কাছে কোর্টের রেকর্ড ছিল না। তিনি আদেশ দিয়ে রেকর্ড আনতে পারতেন। তিনি তাঁর কোর্টে মামলাটি পেন্ডিংও রাখলেন না। নিষ্পত্তি করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি (জেলা জজ) দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। আমরা কোনো কিছু পরিবর্তন করতে চাইলে অপর পক্ষকে ডেকে শুনি। একটা অন্যায়কে ঢাকতে গিয়ে আরও কয়টা অন্যায় করেছেন দেখেন। তার স্টাফরা সার্টিফায়েড কপি দিয়েছে। এখন তো স্টাফদের না হয় ওনার চাকরি যাবে।’
হাইকোর্ট বলেন, ‘এটা টেম্পারিং। তার নিজের আদেশ নিজেই কেটে দিয়েছেন। আপনি আদালতের আদেশ টেম্পারিং করেছেন। এতে আপনার বুক কাঁপল না?’ এ সময় সাঈদ আহমেদ রাজা বারবার ক্ষমার আরজি জানাতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটু ক্লোজ ডোর করি। যা বলি সব তো… ।’ তবে এর বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অমিত তালুকদার। এ সময় আদালত জেলা জজের কাছে তাঁর অবসরের তারিখ জানতে চান। জেলা জজ বলেন, ‘১৪ আগস্ট। তিনি এগিয়ে গিয়ে বলেন, ভুল হয়েছে বলে কেটে দিয়েছি। এখানে দুটো শব্দ কেবল।’
আদালত বলেন, ‘উনি (জেলা জজ) তো এখনো অস্বীকার করছে। এটা ভুল না, অপরাধ। আপনি খণ্ডন (আদেশের পরিবর্তনের বিষয়ে) করতে চাচ্ছেন?’ আদালত সাঈদ আহমেদ রাজার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি যে অনুতাপ দেখাচ্ছেন সেটা তো তাঁর (জেলা জজ) মধ্যে নেই। অনুতাপ অন্তর থেকে হতে হবে, সেটি দেখছি না। সব স্টাফকে ডাকব? ট্রায়াল এখানে হবে?’ এ সময় সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘একজনের ভুলের জন্য এটা করবেন না। আমরা লজ্জা পাচ্ছি।’ আদালত বলেন, ‘আপনারা লজ্জা পাচ্ছেন, কিন্তু উনার (জেলা জজ) মধ্যে তা দেখছি না।’
শুনানির একপর্যায়ে শরীর খারাপ লাগছে জানালে জেলা জজকে বসতে বলেন হাইকোর্ট। পরে তিনি কপালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকেন। এরপর তাঁর পক্ষে থাকা অপর আইনজীবী আবদুন নূর দুলাল আবেদনের শুনানির জন্য সময়ের আরজি জানান। আদালত ২৭ জুলাই পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ঠিক করে দেন।
এদিকে আদালত থেকে বের হবার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জেলা জজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুন।’
জানতে চাইলে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘জামিন আদেশে লেখা ছিল হাজত বাস। কিন্তু সার্টিফায়েড কপিতে তা নেই। হাজত বাস–শব্দ দুটি বিচারক কেটে দিয়েছিলেন। এটার জন্যই আদালত বলেছেন টেম্পারিং হয়েছে।’
জানা যায়, জমির দখল নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে করা একটি মামলায় ৯ জন আসামি হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তবে হাইকোর্ট তাঁদের জামিন না দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী গত ২১ মে আসামিরা কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে সার্টিফায়েড কপি ছাড়া একই দিন জেলা ও দায়রা জজের কাছে আসামিদের পক্ষ থেকে আবেদন করলে তাঁদের জামিন দেওয়া হয়।
পরবর্তীকালে আসামিদের জামিন চ্যালেঞ্জ করে মামলার বাদী রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম (রিনা) হাইকোর্টে আবেদন করেন। আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন।