স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ‘অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করে দিন, নইলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’ আজ শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজারের সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঝটিকা অভিযানে এ কথা বলেন তিনি।
শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ করেই অনির্ধারিত একটি অভিযানে কক্সবাজারের বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইউনিয়ন হাসপাতাল লিমিটেড এবং এরপরই অনির্ধারিত আরেকটি অভিযানে কক্সবাজার আড়াই শ বেডের সরকারি সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) মইনুল হোসেন এবং চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
কক্সবাজারের আড়াই শ বেডের সদর হাসপাতালসংলগ্ন বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইউনিয়ন হাসপাতাল লিমিটেড পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেখানে বেশ কিছু অনিয়ম দেখতে পান। হাসপাতালটিতে আইসিইউ, সিটি স্ক্যান চিকিৎসা ব্যবস্থার অনুমোদন না থাকলেও সেখানে আইসিইউ ও সিটি স্ক্যান ব্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সের উপস্থিতি দেখতে না পেয়ে হাসপাতালের ম্যানেজারের কক্ষে গেলে সেখানে কর্তব্যরত ম্যানেজারকে ধূমপানরত অবস্থায় দেখতে পান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
হাসপাতালের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভালো না থাকার পরও সেখানে অসংখ্য রোগী ভর্তি দেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘একটি বেসরকারি বি ক্যাটাগরির হাসপাতালে ডাক্তার নেই, নার্স নেই, ম্যানেজার নিজেই ধূমপান করেন অথচ সেই হাসপাতালে রোগী এত ভর্তি হলো কী করে সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।
এর সঙ্গে অবৈধভাবে এখানে আইসিইউতে রোগী ভর্তি রাখা হচ্ছে অথচ আইসিইউয়ের অনুমোদন নেই, আইসিইউ চালানোর দক্ষ লোকবল নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এসব অনিয়ম দেশের সর্বত্রই এত দিন করা হলেও এখন থেকে আর কেউ পার পাবে না। এসব অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মালিকদের নিজ নিজ অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে আমি প্রথমে বুঝিয়ে বলেছি। কেউ শুনেছে কথা, কেউ শোনেনি।
আমি আবারও তাদেরকে অনুমোদনহীন অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করে দিতে অনুরোধ করছি। যারা বন্ধ করছে না, আমি এখন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী উল্লিখিত বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইউনিয়ন হাসপাতাল লিমিটেডের অবৈধ আইসিইউ ইউনিটে চিকিৎসারত গুরুতর অসুস্থ এক রোগীকে দ্রততম সময়ে পার্শ্ববর্তী সরকারি সদর হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা নেন। তিনি তৎক্ষণাৎ সাথে উপস্থিত পরিচালককে (হাসপাতাল) উল্লিখিত ইউনিয়ন হাসপাতাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন।
পরে আরেকটি ঝটিকা অভিযানে কক্সবাজারের আড়াই শ বেডের সরকারি সদর হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সেখানে গিয়ে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের কাছে চিকিৎসক, নার্সদের হাজিরা খাতা অনুযায়ী উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। মন্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং চিকিৎসার খোঁজ নেন। সরকারি হাসপাতালে সেবা ব্যবস্থা বৃদ্ধিতে আরো কী করতে হবে সে ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপস্থিত হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা দেন।
তিন দিনব্যাপী কক্সবাজার জেলা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বর্তমানে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। সফরের অংশ হিসেবে আজ সকালে কক্সবাজারের একটি হোটেলে ‘চিকিৎসক অধ্যক্ষ সম্মেলন-২০২৪’-এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।