দেশে সার্কাসসহ চাঁদাবাজির কাজে হাতির ব্যবহারে ব্যক্তিমালিকানায় লাইসেন্স দেওয়া এবং লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে এখন থেকে সার্কাস বা চাঁদাবাজির মতো বাণিজ্যিক কাজে হাতি ব্যবহার করা যাবে না।
আদালত একই সঙ্গে হাতির ওপর নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতা বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এবং হাতিকে বিনোদনের কাজে ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিমালিকানায় নতুন করে লাইসেন্স দেওয়া ও লাইসেন্স নবায়ন কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। এ সংক্রান্ত মামলার বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে বন্যপ্রাণী হাতি লালন-পালনের জন্য নতুন করে লাইসেন্স ইস্যু এবং পুরনো লাইসেন্স নবায়নের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আদালত।
জনস্বার্থে করা এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বন্দি হাতির সার্কাস, হাতির পিঠে ভ্রমণ, বিয়ে বাড়িতে শোভাবর্ধন, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের র্যালিতে বিজ্ঞাপনের মতো বিভিন্ন বিনোদন কাজে ব্যবহার করা এবং এই ব্যবহারের জন্য হাতিকে বাধ্য করতে নির্যাতনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
অভিনেত্রী জয়া আহসান এবং প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এ রিট করে। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্থপতি রাকিবুল হক এমিল।
রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ক্যাপ্টিভ হাতিকে নির্যাতনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ বন্ধে, তাদের বিনোদনের কাজে ব্যবহার এবং হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে সংগঠনটি বেশ কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের কর্মসূচি দিয়ে আসছে।
এরই মধ্যে দুবার বন ভবন ঘেরাও করেন প্রাণী অধিকারকর্মীরা। এসময় বন বিভাগের পক্ষ থেকে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও পরে তার কোনো ফলপ্রসূ ভূমিকা দেখা যায়নি। নির্যাতিত হাতিদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উপযুক্ত জবাব আসেনি বিভাগটির পক্ষ থেকে।
সেখানে বলা হয়, নির্যাতনের শিকার হাতিরা প্রায়ই নিজের ভেতরের ক্ষোভ ও যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। তারা লোকালয়ে তাণ্ডব ঘটিয়ে বিভিন্ন সময় অনেকেরই প্রাণহানি ঘটিয়েছে। কিছু অসৎ ব্যক্তির অনৈতিক ব্যবসা ও বেআইনি চাঁদা বাণিজ্যকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে জনগণের জানমালের এ ক্ষতি গ্রহণযোগ্য নয়। আইইউসিএন’র লাল তালিকাভুক্ত প্রাণী হিসেবে এশিয়ান হাতি বর্তমানে মহা বিপদাপন্ন হওয়া সত্ত্বেও এই হাতিকে বনবিভাগ থেকে ব্যক্তিমালিকানায় সার্কাসের কাজে ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি বর্তমানে প্রশ্নবিদ্ধ।
আবেদনে আরও বলা হয়, এই সার্কাস এবং চাঁদাবাজিতে বাধ্য করতে শৈশব থেকেই মা হাতির কাছ থেকে শাবককে ছাড়িয়ে নিয়ে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়। হাতির মাহুত চাঁদাবাজির সময় একটি ধাতব হুক হাতে নিয়ে বসে থাকেন। সেটা দিয়ে হাতির শরীরের বিভিন্ন দুর্বল স্থানে আঘাত করে চাঁদাবাজিসহ মানুষের ওপর চড়াও হতে বাধ্য করেন। এ প্রক্রিয়াটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২ এবং প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯ এর পরিপন্থি।