শেরপুরের নকলা উপজেলায় শফিউজ্জামান রানা নামে এক সাংবাদিককে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এ কারাদণ্ড দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শিহাবুল আরিফ।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শফিউজ্জামান রানা দেশ রূপান্তর পত্রিকার নকলা উপজেলা সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার(৫ মার্চ) নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিনের কাছে একটি প্রকল্পের ল্যাপটপ ও কম্পিউটার ক্রয় করার তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানা। আবেদন করার পর আবেদনের রিসিভ কপি চান তিনি। এ সময় ইউএনওর অনুমতি ছাড়া রিসিভ কপি দেবেন না বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের গোপনীয় সহকারী (সিএ) শিলা আক্তার। ইউএনও মিটিংয়ে থাকায় সাংবাদিককে তিনি অপেক্ষা করতে বলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরও ইউএনওকে না পেয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসককে মোবাইলে ফোনে বিষয়টি জানান শফিউজ্জামান রানা। হায়রানির কথা উচ্চস্বরে ইউএনওর কার্যালয়েই বলেন ওই সাংবাদিক। এতে ইউএনও ক্ষিপ্ত হয়ে মিটিং শেষ না করেই মিটিং রুম থেকে বের হন। পরে পুলিশকে ডেকে আনেন ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শিহাবুল আরিফকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার নির্দেশনা দেন। সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন। তিনি বলেন, ইউএনও অফিসে ঢুকে গোপন তথ্যের ফাইল নেওয়ার জন্য টানাটানি করেন ওই সাংবাদিক। বাধা দিলে অফিসের এক নারী কর্মচারীর সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এ সময় এক মুক্তিযোদ্ধাকেও ধাক্কা দেন। পরে ওই সাংবাদিক বের হয়ে উচ্চস্বরে গালিগালাজ করতে থাকেন। রুম থেকে বের হয়ে দেখি অনেক লোকজন। এ সময় পুলিশও এসেছে। সহকারী কমিশনার ছিলেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শিহাবুল আরিফের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
দণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিকের স্ত্রী বন্যা আক্তার বলেন, গত মঙ্গলবার আমার স্বামী রানা ছেলে শাহরিয়ার জাহান মাহিনকে (১৫) সঙ্গে নিয়ে এডিপি প্রকল্পের কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ক্রয়সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে আবেদন জমা দেন। আবেদনটি কার্যালয়ের কর্মচারী গোপনীয় সহকারী (সিএ) শীলার কাছে দিয়ে রিসিভ কপি চান। শীলা তাকে অপেক্ষা করতে বলেন। রানা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর আবার শীলার কাছে রিসিভ কপি চান। তখন শীলা বলেন, ‘ইউএনওকে ছাড়া রিসিভ কপি দেওয়া যাবে না।’ পরে রানা জেলা প্রশাসককে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। এতে ইউএনও আরও ক্ষিপ্ত হন। এ সময় ইউএনও রানাকে ভুয়া সাংবাদিক এবং ছেলে মাহিনকে ‘বাপের মতো চোর সাংবাদিক হবি’ এ কথা বলেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কারাদণ্ড দিয়েছে।
শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুকতাদিরুল আহমেদ বলেন, ওই সাংবাদিক ইউএনও অফিসে গিয়ে এক নারী সহকর্মীর সঙ্গে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কথা বলেন। এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকেও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। অফিসের ডকুমেন্ট নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য এসেছিলেন। এমন সময় আটক করা হয়। এ সময় অফিসের পরিস্থিতিরও অবনতি হয়। পুলিশও চলে এসেছিল। পরে আমাদের এসি ল্যান্ড ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।