চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার ওসিকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। শুক্রবার ওসি তোফায়েল আহমেদের সরকারি নম্বরে ফোন করে এ হুমকি দেন তিনি। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাঁশখালী থানায় জিডি করা হয়। প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর এ ধরনের আচরণ ‘সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশের জন্য হুমকি’ বলে মন্তব্য করা হয়।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঁশখালী পৌরসভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মোস্তাফিজুর রহমানের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তার সামনে নিজের মালিকাধীন মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান। ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দুই পক্ষের উত্তেজনা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে হারুনুর রশিদ নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০ জনের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় মামলা করেন। দুই দিন পর শুক্রবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বেলাল উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০ জনের বিরুদ্ধে পাল্টা আরেকটি মামলা করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নিজেদের অনুসারীদের নামে মামলার বিষয়টি জানতে পেরে ২২ ডিসেম্বর বেলা ৩টার দিকে বাঁশখালী থানার ওসির সরকারি নম্বরে ফোন করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ হোসেনকে ফোন করা হলে তিনিও এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এর আগে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধ মামলা দায়ের করতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আজ মঙ্গলবার আদালতে উক্ত মামলা দায়ের করা হয়।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. আবদুছ সালাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে চট্টগ্রাম জেলা এবং বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে কমিশনের মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। গত ৩০ নভেম্বর নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে প্রশ্ন করেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির স্টাফ রিপোর্টার রাকিব উদ্দিন। প্রশ্ন শোনার সঙ্গে সঙ্গে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী তেড়ে গিয়ে ওই সাংবাদিককে ঘুষি মারেন। এক পর্যায়ে ক্যামেরা ট্রাইপড ও বুম ছুড়ে ফেলে দেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে এমপির সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরাও তাদের সঙ্গে হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। পরে এমপি দ্রুত গাড়িতে উঠে পালিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিকরা গাড়ির গতিরোধ করে তার বক্তব্য নিতে চাইলে সেখানেও এমপির দলবল সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন এবং এমপি নিজ গাড়ি দিয়ে সাংবাদিকদের চাপ দিতে দিতে দ্রুত পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আবু সালেম মো. নোমানের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়। কমিটি উভয়পক্ষের জবাব শুনে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠান। কমিটির অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাংবাদিককে গালিগালাজ ও মারধর করে মাটিতে ফেলার এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া কমিটির প্রতিদেনে বলা হয়, মোস্তাফিজুর ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’ এর ৮ (খ) বিধি লঙ্ঘন করেছেন। এর ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের নিয়মিত অভিযোগ দায়েরের জন্য উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয় কমিশন।
উল্লেখ্য , ২০১৬ সারে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর, সাংবাদিককে ফোন করে গালিগালাজ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য, এমপির বিরুদ্ধে মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, বাঁশখালীতে নিজ দলের বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনপীড়ন, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিলসহ বিভিন্ন কারণে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।