দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একপক্ষীয় ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মন্তব্য করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, এবারের নির্বাচন অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। এ নির্বাচন দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। নির্বাচনে শেষের এক ঘণ্টায় ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোটসহ মোট ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। এতে নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। সংস্থাটি ৫০টি আসনের তথ্য নিয়ে গবেষণা করেছে। টিআইবির মতে, ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া হলেও বেশির ভাগ আসনে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। বিএনপিসহ ১৫টি নিবন্ধিত দলের অনুপস্থিতি ও তাদের নির্বাচন বর্জনের কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল না ২৪১টি আসনের ভোট। নির্বাচনে প্রার্থীরা গড়ে এক কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৭৭৭ টাকা করে খরচ করেছেন, যা ব্যয়সীমার ছয় গুণ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সবচেয়ে ‘ব্যয়বহুল’ উল্লেখ করে সংস্থাটি জানিয়েছে, এবারের নির্বাচন আয়োজনে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এই ব্যয় ছিল ৭০০ কোটি, ২০১৪ সালে ৩০০ কোটি টাকা ও ২০০৮ সালে ছিল ২০০ কোটি টাকা।
সংস্থাটির মতে, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে দুই বড় দলের বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানের কারণে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অন্যতম অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রশাসনও অনুরূপভাবে একই এজেন্ডার সহায়ক ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়েছে। [৭] টিআইবি বলছে, সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের সম্ভাব্য সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে যতটুকু আগ্রহ থাকবে, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হবে শুদ্ধাচার ও নৈতিকতার মানদণ্ডে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন এবং তার প্রভাব। দেশের গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ক্রমাগত গভীরতর হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতা অব্যাহত থাকার কৌশল বাস্তবায়নে একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ হয়তো হবে না, তবে এ সাফল্য রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, গণতান্ত্রিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিতের যে পূর্বশর্ত থাকে, তা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিপালিত হয়নি।