জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ পাঁচ দফা দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মশাল মিছিল করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিতে থাকলে প্রায় আধাঘণ্টা পর বাসভবন থেকে বের হয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’-এর ব্যানারে শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে উপাচার্য বাসভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- সব হল থেকে বহিরাগত ও অছাত্রদের বের করে নিয়মিত ছাত্রদের আবাসন নিশ্চিত করা, যৌন নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তিসহ ক্যাম্পাসে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা, ধর্ষণের ঘটনায় প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করা এবং সুষ্ঠু-তদন্তের স্বার্থে তদন্ত চলাকালে তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া, মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
সমাবেশে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোনো বিচার হয়নি। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাতে হাত রেখে চলছে। ক্যাম্পাসে যারা সন্ত্রাসী রাজনীতি করে বেড়ায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের কোনো বিচার করেনি। তারা গণরুম, গেস্টরুম জিইয়ে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে। যার ফলশ্রুতিতে জাকসু নির্বাচন দিতে তারা ভয় পায়।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, প্রশাসন হল থেকে অছাত্রদের বের করতে পাঁচ কর্মদিবস সময় চেয়েছে আমরা দিয়েছি। কিন্তু উপাচার্য একটি প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এ বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাসীদের কারখানায় পরিণত হয়েছে। এ অছাত্ররাই চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। অছাত্রদের বের করতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কখনই সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে না। প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে অছাত্রদের বের করতে ব্যর্থ হলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।
পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, এ ন্যক্কারজনক ঘটনায় যারা জড়িত এবং হলে যেসব অছাত্র অবস্থান করছেন তাদের ব্যাপারে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উপাচার্য। এরই মধ্যে তা শেষ হয়ে গেছে; অথচ তিনি এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট বর্ণনা আমাদের দেননি। আমরা জেনেছি, এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি। ধর্ষণের মতো এ ন্যক্কারজনক ঘটনার পরেও প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রভোস্ট বহাল তবিয়তে আছে। অতীতে এরকম ঘটনার বিচার না হওয়ায় আজকের এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম। তিনি বলেন, হল থেকে অছাত্রদের বের করতে আমরা পুরোপুরি সফল হয়নি। বেশকিছু অছাত্রদের বের করতে পেরেছি। আমি আপনাদের কাছে সহযোগিতা এবং আরও দু’চারদিন সময় চাচ্ছি।
এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখান। উপাচার্যের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলী বলেন, আজ রাতের মধ্যে অছাত্রদের হল থেকে বের করুন। নির্ধারিত পাঁচদিন শেষ হওয়ায় আমরা আগামীকাল থেকে প্রতীকী অবরোধে যাবো। ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের নানা কর্মসূচি চলবে। এরপরও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারলে একদফা দাবিতে আন্দোলন করতে বাধ্য হবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম ও মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব জামানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান। তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মশাল মিছিলে উপস্থিত ছিলেন- ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল রাকিব প্রমুখ।